আজ শুক্রবার, ১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

নারায়ণগঞ্জে কোন্দলই হতে পারে প্রার্থীদের ভরাডুবি

নারায়ণগঞ্জে কোন্দলই হতে পারে প্রার্থীদের ভরাডুবি

নারায়ণগঞ্জে কোন্দলই হতে পারে প্রার্থীদের ভরাডুবি

সংবাদচর্চা রিপোর্ট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ৪ মাস বাকী। সারা দেশে নির্বাচনী হাওয়া বাইছে। বাদ নেই নারায়ণগঞ্জেও। নারায়ণগঞ্জে মোট ৫টি আসন রয়েছে। প্রত্যেকটা আসনে জোট-মহাজোটের নেতাদের মধ্যে চরম কোন্দল দেখা দিয়েছে। রিবোধ রয়েছে বিএনপির মধ্যে । তারা মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মনোনয়ন ইস্যুতে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির মধ্যে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিএনপির নেতারা কেউ কেউ ইদ পরবর্তী কোন অনুষ্ঠান করতে পারছে না।

আওয়ামীলীগেও একই অবস্থা। বর্তমান এমপিদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। যোগ্যতা থাকুক আর না থাকুক অনেকেই আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা বিভিন্ন চক্রের সাথে আতাত করে বর্তমান এমপিদের উন্নয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তাতে ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা অনেকটাই চাপের মুখে রয়েছে। আ.লীগ বিএনপি জাতীয় পাটির মধ্যে বর্তমানে যে দ্বন্দ্ব চলছে তা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনে কোন্দলই হতে পারে প্রার্থীদের ভরাডুবির মুল কারণ।

নারায়ণগঞ্জে ৫টি আসনের মধ্যে ৩টি আসন ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের এবং ২টি আসন জাতীয় পাটির দখলে রয়েছে।
নারায়নগঞ্জ-১ আসনে (রূপগঞ্জ) আওয়ামীলীগ সমর্থিত বর্তমান এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী বীরপ্রতীক। তিনি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামানকে প্রায় ৫০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে। নির্বাচিত হওয়ার পর গোলাম দস্তগীর গাজী রূপগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছে।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোলাম দস্তগীর গাজী প্রায় ১ লক্ষ ভোটের ব্যবধানে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে পরাজিত করে দ্বিতীয় বারের মত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি আগামী নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তবে তার মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত বলে জানা গেছে। এখানে আওয়ামীলীগের সকল নেতাকর্মী গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

রূপগঞ্জে বিএনপির তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। তারা তিনটি বলয়ে বিভক্ত। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি ও খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এড.তৈমুর আলম খন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূইয়া।ঈদ পূর্ণমিলনীকে কেন্দ্র করে সর্বশেষ দিপুর প্রোগ্রামে পুলিশি বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে কাজী মনির,দিপু,তৈমুরের মধ্যে মনসতাত্বিক দূরত্ব তৈরী হয়েছে। তাদের কোন্দলের কারণে রূপগঞ্জে বিএনপি ঘুরে দারাতে পারছে না।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে (আড়াইহাজার) জমে উঠেছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ত্রিমুখী শেষ মুহূর্তের প্রচারণা। এখানে বর্তমানে নজরুল ইসলাম বাবু ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের এমপি । তিনি আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আড়াইহাজারে আওয়ামীলীগের তিন জন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছে। তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ইকবাল পারভেজ, সাবেক রাষ্ট্রদূত আওয়ামীলীগ নেতা মমতাজ আলী। জাতীয় পাটির একক প্রার্থী আলমগীর হোসেন লোটন।তাছাড়া বিএনপিরও রয়েছে আজাদ ,সুমন,আঙ্গুর তিন প্রার্থী । তারা গোপনে প্রচারণা চালাচ্ছে সরকারের ভুল বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করছে।এখানেও সকল দলের প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে চরম কোন্দল।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে বর্তমান এমপি জাতীয় পাটির লিয়াকত হোসেন খোকা । খোকা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে পিছিয়ে নেই জাপা নেত্রী মৌসুমী। সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডাঃ আবু জাফর চৌধুরী বীরু, সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত, মাহফুজুর রহমান কালাম। এখানে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম, এটি এম কামাল, আজাহারুল ইসলাম মান্নান। তারা সবাই পর্দার আড়াল থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু দলের ভিতরে নিজেদের মধ্যে ঐক্য না থাকার কারণে এখানেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই প্রার্থীরা।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে (ফতুল্লা- সিদ্ধিরগঞ্জ) বর্তমান এমপি আওয়ামীলীগের শামীম ওসমান। এখানেও আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন শ্রমিকলীগ নেতা কাউছার আহমেদ পলাশ,আওয়ামীলীগ নেতা কামাল মৃধা। শামীম ওসমান ইতিমধ্যে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কেন্দ্র কমিটি গঠণের মাধ্যমে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে পলাশের রয়েছে শ্রমিকদের বিশাল ভোট ব্যাংক। তাই শ্রমিকদের নিয়ে অনেকটা কৌশলে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে কামাল মৃধা আওয়ামীলীগের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে বেশ কিছু পোষ্টার লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে সবার আলোচনায় আসেন । তাছাড়া ফতুল্লা সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপির প্রায় ৩ জন প্রার্থী রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম শাহ আলম, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ, গিয়াস উদ্দিন।

নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে (সদর- বন্দর) বর্তমান এমপি জাপার সেলিম ওসমান। এখানে জাতীয় পাটিকে হটাতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পৃথক পৃথক ভাবে গণসংযোগ করে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের মধ্যে যারা রয়েছে তারা হলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এড.আনিছুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সুফিয়ান, মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক এড.খোকন একাধিক প্রার্থী রয়েছে। তারা হলেন সাবেক এমপি আবুল কালাম,খোরশেদ আলম খন্দকার, এ্যাড সাখাওয়াত।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে, ধনী জেলায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের টাকার কোন অভাব নেই। দলীয় কোন্দলের কারণে যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারে। আর দলীয় ঐক্য তৈরী না হলে আগামী নির্বাচনে যে কোন দলের প্রার্থীদের ভরাডুবি নিশ্চিত।